খলিশা ফুলের মধুই পদ্ম মধু
পুষ্টি গুনাগুন সমৃদ্ধ ও অত্যন্ত সুস্বাদু এই মধু


সুন্দরবনের খলিশা ফুলের মধু

বাংলাদেশ ও ভারতে অবস্থিত পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবনে মধু সংগ্রহের কথা আমরা সবাই জানি।জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাওয়াল এরা বছরের নির্দিষ্ট সময় এই মধু সংগ্রহ করে থাকে। তবে সুন্দরবনের খলিশা গাছের ফুলের মধু হল সবথেকে বেশি আকর্ষণীয় ও জনপ্রিয়। দামও বেশি এই মধুর। মার্চ-এপ্রিল মাসে খলিশা ফুল ফোটে, যা মধু সংগ্রহের সময়। এই মধু অন্য মধুর তুলনায় একটু সাদাটে হওয়ায় এই মধু কে পদ্ম মধু ও বলে থেকে স্থানীয়রা। খলিশা ফুল স্বল্প স্থায়ী হওয়ায় মধুর উৎপাদন অন্য মধুর তুলনায় কম হয় বলে এর দাম তুলনামূলক বেশি। খলিশা ফুলের মধু অতি সুস্বাদু এবং মিষ্টি সুগন্ধযুক্ত। খলিশা ফুল ছাড়াও সুন্দরবনে গরান, বাইন, কেওড়া, গেওয়া প্রভৃতি গাছের ফুল থেকে মধু হয়।
খলিশা ফুলের মধু
সুন্দরবনের অনেক গাছপালার ভিড়ে ছোট থেকে মাঝারি গড়নের একটি গাছ হল খলিশা। এর বৈজ্ঞানিক নাম Aegiceras Corniculatum। এটি গুল্ম বা ছোট বৃক্ষজাতীয় প্রকৃত ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ। প্রায় ৫-৭ মিটার পর্যন্ত বাড়ে। সুন্দরবনে খলিশা সব জায়গায় দেখতে পাওয়া যায় না। খলিশা ফুল সাদা রঙের হয়। ফুটলে সারা দিন মৌমাছি মধু সংগ্রহের জন্য ভিড় করে। বহুদূর থেকে ফুলের সৌরভ পেয়ে মৌমাছি, প্রজাপতি ছুটে আসে। সুন্দরবনের প্রজাপতিরও পছন্দের ফুল এটি। বিরল এই উদ্ভিদ সাধারণত সুন্দরবনে বিচ্ছিন্নভাবে জন্মে। সমষ্টিগতভাবে থাকে না। প্রচুর আলো পড়ে এমন পরিবেশে ভালো জন্মে। বনের অন্ধকার এলাকায় জন্মে না। লবণাক্ততার মাত্রা যেখানে বেশি সেখানে এরা ভালো থাকে। খলিশার ফল দেখতে কিছুটা মটরশুঁটির মতো। লম্বায় প্রায় ৫-৮ সেন্টিমিটার। প্রতিটি ফলে একটি বীজ থাকে। বীজ থেকে চারা গজায়। খলিশার পাতা বিভিন্ন প্রজাতির মথ, ক্যাটারপিলারের খাবার। এটি  বাংলাদেশ, ভারত, পাপুয়া নিউগিনি, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশের ম্যানগ্রোভ অরণ্যে জন্মে থাকে। খলিশা ফুলের গাছ ‘হানিপ্লান্ট’ নামে পরিচিত।
লতা জাতীয় এক প্রকার গাছের ফুল দিয়ে শুরু হয় সুন্দরবনের ফুল ফোটা। এরপর খলিশা ফুলে ছেয়ে যায় সুন্দরবন। ঠিক ওই সময়ে যে মধু সংগ্রহ হয় তাই খলিশার মধু। একটা নির্দিষ্ট সময়ে ফুল ফোটা, মৌচাক তৈরি মধু সংগ্রহ সব এক সাথে চলতে থাকে সুন্দরবনে। সুন্দরবনে ফুল ফোটার নির্দিষ্ট সময়ের বিভিন্ন পর্যায়ে ফোটে লতা, খলিশা গরানের ফুল। এই ফুলগুলোর শেষের দিকে গরানের শেষ সময়ে আসে কেওড়া, বাইনসহ আরো কিছু ফুল। সুন্দরবনের সরগরম মধু মৌসুম চলে চৈত্র থেকে জ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত। এসময় খলিশার মধু বেশি পাওয়া যায়। তারপর গরান মধু এবং পরবর্তীতে বাইন, কেওড়ার মধু পাওয়া যায়।
খলিশা ফুলের মধুর গুণাগুণ উপকারিতা অন্য মধুর মতই শুধু পার্থক্য এর অতুলনীয় স্বাদ। এছাড়াও পেটের অসুখের জন্যে অত্যন্ত ভালো কাজ করে এই মধু। বিশেষ করে বাচ্চাদের পেটের অসুখের জন্যে। অধিক চাহিদা এবং স্বল্প সময়ে পাওয়া বলে, খলিশা ফুলের মধুর দাম তুলনা মুলক এক্টু বেশি হয় কেজি খলিশা ফুলের মধুর দাম কমবেশি ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে কিছু অনলাইন ব্যাবসায়ি এই মধু কে অধিক দামে বিক্রি করছে। 


সরিষা ফুলের মধু চেনার উপায় ও এর উপকারিতা
বাংলাদেশে সর্বাধিক উৎপাদিত মধু এই সরিষা ফুলের মধু।